সহজেই সুস্বাদু পরোটা বানানোর রেসিপি। জানতে হলে ডটকম

পরোটা, বাঙালি রান্নার অন্যতম প্রিয় একটি খাবার, যা শুধুমাত্র স্বাদের দিক থেকে নয়, তার সহজ প্রস্তুত প্রণালীর জন্যও জনপ্রিয়। আমাদের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরোটা। শুধু সকালে নাস্তার জন্য নয়, দুপুরের বা রাতের খাবারের সঙ্গেও সমানভাবে মানিয়ে যায়। প্রাচীনকাল থেকে আমাদের নানীরা এবং মায়েরা যেভাবে শিখিয়ে গেছেন, সেই ঐতিহ্যবাহী রেসিপির সাথেই আজ আমরা আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব।

পরোটা রেসিপি

পরোটা রেসিপি 

সুপ্রিয় পাঠক,আজকে আমরা পরোটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব যেখানে থাকবে পরোটার ধরন এবং ধরন অনুযায়ী উপকরন ও বানানোর পদ্ধতিসহ সমস্ত কিছু। এমনকি পরোটা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা  নিয়ে থাকছে বিস্তারিত আলোচনা।

পরোটার ধরন 

পরোটার ক্ষেত্রে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এর বৈচিত্র্য। শুধুমাত্র ময়দা এবং তেল দিয়ে তৈরি সাধারণ পরোটা থেকে শুরু করে, আলু পরোটা, মুগ ডালের পরোটা, পনির পরোটা, মাংসের পরোটা, এমনকি মিষ্টি পরোটাও তৈরি করা যায়। প্রতিটি ধরণের পরোটার নিজস্ব স্বাদ এবং গন্ধ থাকে যা অন্য সবকিছুর থেকে একেবারেই আলাদা। 

এছাড়াও, পরোটার সাথে বিভিন্ন ধরণের আচার, দই, চাটনি বা কারি পরিবেশন করা যায় যা খাবারের স্বাদকে আরও বাড়িয়ে তোলে। সুতরাং আজ আমরা পরোটার সবগুলো ধরন নিয়ে আলোচনা করব। 

সাধারণত আমাদের দেশে নানান ধরনের পরোটা তৈরি করা হয়। যেমন:

সাদা পরোটা: 

সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রচলিত পরোটা। এটি ময়দা, তেল এবং লবণ দিয়ে তৈরি করা হয়।

আলু পরোটা: 

ভেজে রাখা আলু, পেঁয়াজ, ধনেপাতা এবং মশলার মিশ্রণ দিয়ে তৈরি।

মুগ ডালের পরোটা: 

মুগ ডাল বেটে ময়দার সাথে মিশিয়ে তৈরি করা হয়।

পনির পরোটা: 

পনির, পেঁয়াজ এবং কাঁচামরিচের পুর দিয়ে তৈরি করা।

মাংসের পরোটা

মাংসের কিমা দিয়ে তৈরি করা হয়, যা মাংস প্রেমীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।

পরোটা বানানোর উপকরণ:

প্রশ্ন উত্তর
ময়দা: ২ কাপ
তেল: ২ টেবিল চামচ
লবণ: স্বাদমতো
পানি: প্রয়োজনমতো (ডো তৈরি করার জন্য)

পরোটার সাথে স্বাস্থ্যকর উপকরণ:

যদি আপনি স্বাস্থ্য সচেতন হন, তাহলে পরোটায় কিছু স্বাস্থ্যকর উপকরণ যোগ করতে পারেন। যেমন:

  • গমের আটা: ময়দার বদলে গমের আটা ব্যবহার করতে পারেন।
  • সবজি: বিভিন্ন সবজি যেমন পালং শাক, মেথি শাক, কুঁচানো গাজর ইত্যাদি ডোতে মেশাতে পারেন।
  • কম তেল: তেল বা ঘির পরিমাণ কমিয়ে বেক করে পরোটা তৈরি করতে পারেন।

পরোটার সাথে কিছু মজার টিপস:

মচমচে পরোটা: পরোটা মচমচে করতে চাইলে বেলার সময় তেল বা ঘি ভালো করে মাখিয়ে নিন। ফ্রিজে সংরক্ষণ: বেশি পরোটা বানিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন। ফ্রিজ থেকে বের করে হালকা গরম করে নিলেই হয়ে যাবে। পুর ভরাট: পরোটার পুর ভরাট করার সময় খেয়াল রাখুন যাতে পুর সমানভাবে ছড়িয়ে থাকে এবং ভাজার সময় বেরিয়ে না আসে।


পরোটা বানানোর পদ্ধতি :

ডো তৈরি: প্রথমে একটি বড় পাত্রে ময়দা, তেল এবং লবণ মিশিয়ে নিন। অল্প অল্প করে পানি দিয়ে নরম ডো তৈরি করুন। ডো যেন বেশি শক্ত বা নরম না হয়, খেয়াল রাখুন। ডো তৈরি হয়ে গেলে সেটি ১৫-২০ মিনিট ঢেকে রাখুন।

বেলা: ডো থেকে ছোট ছোট লেচি তৈরি করুন। প্রতিটি লেচি ময়দা ছিটিয়ে রুটি আকারে বেলে নিন। রুটি বেলার সময় তেল বা ঘি ছিটিয়ে বেলুন, এতে পরোটা খেতে মচমচে হবে।

ভাজা: একটি প্যানে তেল বা ঘি গরম করুন। পরোটাটি প্যানে দিয়ে অল্প তেলে সোনালী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। প্রতিটি পরোটার দুই পাশ ভালোভাবে ভাজা হলে তুলে নিন।

পরিবেশন: গরম গরম পরোটা পরিবেশন করুন। পরোটার সাথে দই, আচার বা আপনার পছন্দের কারি দিয়ে খেতে পারেন।

পরোটা খাওয়ার উপকারিতা:

 ১. পুষ্টিগুণে ভরপুর:

পরোটা ময়দা বা আটার তৈরি, যা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফাইবারের ভালো উৎস। বিশেষ করে গমের আটা দিয়ে তৈরি পরোটায় উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে যা হজমে সহায়ক।

২. সহজলভ্য এবং দ্রুত প্রস্তুতযোগ্য:

পরোটা তৈরি করা খুবই সহজ এবং এটি কম সময়ে প্রস্তুত করা যায়। বিশেষ করে ব্যস্ত সকালে পরোটা একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। এছাড়া, এটি এমন একটি খাবার যা সহজেই বিভিন্ন উপকরণের সাথে খাওয়া যায়, যেমন দই, আচার, সবজি বা মাংসের কারি।

৩. শিশুদের পছন্দের খাবার:

অনেক শিশুই সবজি বা অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খেতে পছন্দ করে না। কিন্তু পরোটার মধ্যে বিভিন্ন সবজি বা পনির মিশিয়ে তাদের জন্য একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার তৈরি করা যেতে পারে। এটি তাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক হতে পারে।

৪. শক্তি বাড়াতে সহায়ক:

কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ পরোটা তাড়াতাড়ি শক্তি প্রদান করে, যা শারীরিক কাজ বা ব্যায়ামের জন্য প্রয়োজনীয়। সকালের নাস্তায় পরোটা খেলে এটি দীর্ঘ সময় ধরে শরীরকে শক্তি প্রদান করে।

পরোটা খাওয়ার অপকারিতা:

১. উচ্চ ক্যালোরি:

পরোটার প্রধান উপাদান ময়দা বা আটা, যা উচ্চ ক্যালোরি সমৃদ্ধ। বিশেষ করে যদি পরোটা বেশি তেলে ভাজা হয়, তবে এটি আরও বেশি ক্যালোরি যুক্ত হয়। এটি নিয়মিত বেশি পরিমাণে খেলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে।

২. তেলে ভাজা পরোটার অপকারিতা:

বেশি তেলে ভাজা পরোটা খেলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। উচ্চমাত্রার তেল শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য বেশি তেলে ভাজা পরোটা খাওয়া উচিত নয়।

৩. পরোটার অতিরিক্ত লবণ:

অনেকেই পরোটার ডোতে বেশি লবণ ব্যবহার করেন, যা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত লবণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

৪. ফাইবারের ঘাটতি:

যদি শুধুমাত্র ময়দা দিয়ে পরোটা তৈরি করা হয়, তবে এতে ফাইবারের পরিমাণ কম থাকে। ফাইবারের অভাবে হজমের সমস্যা হতে পারে এবং এটি দীর্ঘমেয়াদে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।

পরোটার স্বাস্থ্যকর বিকল্প

১. গমের আটা ব্যবহার:

ময়দার বদলে গমের আটা ব্যবহার করে পরোটা তৈরি করতে পারেন। এতে ফাইবারেরপরিমাণ বেশি থাকে এবং এটি স্বাস্থ্যকরও।

 ২. কম তেলে ভাজা:

পরোটাকে বেশি তেলে না ভেজে, তাওয়া বা গ্রিলে বেক করে তৈরি করতে পারেন। এতে তেলের পরিমাণ কমে এবং ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৩. সবজি যোগ করা:

পরোটার ডোতে বিভিন্ন সবজি যেমন পালং শাক, মেথি শাক, কুঁচানো গাজর ইত্যাদি মিশিয়ে স্বাস্থ্যকর পরোটা তৈরি করতে পারেন।

৪. কম লবণ ব্যবহার:

পরোটার ডো তৈরি করার সময় কম লবণ ব্যবহার করুন এবং প্রাকৃতিক মশলা দিয়ে স্বাদ বাড়ানোর চেষ্টা করুন। এতে পরোটার স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ দুটোই বজায় থাকে।

উপসংহার:

পরোটা একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু খাবার যা খুব সহজে ঘরে বসে তৈরি করা যায়। এটি শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং পারিবারিক বন্ধনের প্রতীক। বিভিন্ন ধরণের পরোটা তৈরি করে আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্নাঘরকে একটি মিনি উৎসবে পরিণত করতে পারেন। আজই চেষ্টা করে দেখুন এবং উপভোগ করুন আপনার হাতের তৈরি মজাদার পরোটা।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন