কুশলী পিঠা রেসিপি। কিভাবে তৈরি করতে হয় - জানতে হলে ডটকম

আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজ আমরা একটি নতুন পিঠা রেসিপি নিয়ে আসছি। এ পিঠাটা মোটামুটি আমাদের ছোট বড় সকালেরই জনপ্রিয়। তাহলো কুশলী পিঠা। অনেকে এটাকে আবার পুলিপিটাও বলে থাকেন।

শীতের সকালে লোভনীয় কুশলী পিঠার স্বাদ জাস্ট ওয়াও! শীতের সকাল মানেই নানা রকমের পিঠা-পায়েস। এই ঋতুর বিশেষ আকর্ষণ হলো কুশলী পিঠা।

কুশলী পিঠা pic

নারকেল কোরার গুঁড়ো দিয়ে তৈরি এই পিঠা মুখরোচক স্বাদের জন্য সকলের কাছেই জনপ্রিয়। কুশলী পিঠা শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং এর পুষ্টিগুণও অনেক। তা আমরা সামনে জানতে পারব। আসুন আমরা জেনে নেই কিভাবে সহজে কুশলী পিঠা বানানো যায়।

কুশলী পিঠা

কুশলী পিঠা বা পুলি পিঠা বানানোর রেসিপি আমরা এখনই শেয়ার করছি। এই পিঠা তৈরি করা খুব সহজ। প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত প্রণালী নিচে দেওয়া হল।

কুশলী পিঠা বানানোর উপকরণ

প্রশ্ন উত্তর
চালের গুঁড়ো
নারিকেল কোরার গুঁড়ো
চিনি
লবণ
তেল
স্বচ্ছ পানি

চালের গুঁড়ো:

 পিঠা তৈরির জন্য ভালো মানের চালের গুঁড়ো ব্যবহার করা উচিত। বাজারে বিভিন্ন ধরণের চালের গুঁড়ো পাওয়া যায়। তবে আতপচাল ব্যবহার করাটা বেস্ট। চেষ্টা করবেন আতপচাল ব্যবহার করার।

নারিকেল কোরার গুঁড়ো: 

উচ্চমানের নারকেলের গুঁড়ো ব্যবহার করলে পিঠার স্বাদ অনেক বেড়ে যায়। নারকেলের গুঁড়ো কেনার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত:

  • তাজা নারকেল: বাজারে তাজা নারকেল থেকে তৈরি নারকেলের গুঁড়ো কিনুন। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি পুরানো নারকেলের গুঁড়ো ব্যবহার করলে পিঠার স্বাদ নষ্ট হয়ে যাবে।
  • গুঁড়োর রঙ: নারকেলের গুঁড়ো ঝকঝকে সাদা রঙের হওয়া উচিত। হলুদ বা বাদামী রঙের গুঁড়ো ব্যবহার করবেন না।
  • গুঁড়োর সুগন্ধি: নারকেলের গুঁড়োর সুগন্ধি হওয়া উচিত। গন্ধহীন বা দুর্গন্ধযুক্ত গুঁড়ো ব্যবহার করবেন না।
  • মূল্য: উচ্চমানের নারকেলের গুঁড়োর দাম বেশি হবে। তবে পিঠার স্বাদ ভালো করার জন্য অল্প বেশি টাকা খরচ করা ঠিক আছে।

চিনি:

পিঠার মিষ্টি ভাবের জন্য চিনি ব্যবহার করা অপরিহার্য। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী অভিজ্ঞতার আলোকে চিনির পরিমাণ কমাতে বা বাড়াতে পারেন।

লবণ:

লবণ পিঠাকে সুস্বাদ করে তোলে। অল্প পরিমাণে পরিমাপমতো লবণ ব্যবহার করুন।

তেল:

পিঠা ভাজার জন্য তেল ভালো টাটকা তেল ব্যবহার করুন। বাজারে ভালোমানের সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। অবশ্য তেল গরম করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন।

পানি:

পুলি পিঠা বানানোর জন্য যে যে খামিরা লাগে তা তৈরির জন্য স্বচ্ছ পানি ব্যবহার করতে হয়। অল্প অল্প করে পানি মিশিয়ে নরম ডো তৈরি করুন। এবং ১০ থেকে ১৫ মিনিট খামিরা এভাবেই পাত্র রেখে দিন।

টিপস:

নারকেলের গুঁড়ো কিনার পরে একটি এয়ারটাইট পাত্রে ভরে রাখুন। এতে গুঁড়ো দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।

কুশলী পিঠার প্রস্তুত প্রণালী

কুশলী পিঠা তৈরি করা খুব সহজ। ধাপে ধাপে পদ্ধতি নীচে দেওয়া হলো:

খামির তৈরি:

 প্রথমে একটি পাত্রে চালের গুঁড়ো বা ময়দা দিন। পরে এর মধ্যে একটি বা দুটো কাঁচা ডিম ভেঙ্গে দিন। এখন কয়েক চামচ (১/২ চা চামচ) খাবারের তেল ময়দাতে বা চালের গুড়োতে দিন। এবং পরিমাপ মতো পানির সাথে মিশিয়ে ডো তৈরি করুন। আর হ্যাঁ  পরিমাপ মতো লবণ দিতে ভুলবেন না। 

এখন খামিরটি পাত্রেই কিছু সময় রেখে দিন। এই দরুন ১৫-২০ মিনিট। খামির ফুলে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। অবশ্য ডো খুব বেশি পাতলা বা ঘন করবেন না। ব্যাস আপনার ডো তৈরি করা হয়ে গেল। এখন পরবর্তী কাজে আসুন। 

নারকেল কোরার গুঁড়ো প্রস্তুত:

 প্রথমে নারিকেলের গুঁড়ো গুলোর সাথে ভালো মানের ঘোর মিশিয়ে নিন। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, খেজুরের গুড় মিশালে খুব ভালো হয়। তারপর একটি কড়াইতে নারকেল কোরার টুকরো গুলো খাবারের তেল দিয়ে বাদামী রঙ হয়ে না আসা পর্যন্ত ভেজে নিন। এবং নারিকেল গুঁড়োর ক্ষীর তৈরি করুন। অতঃপরভাজা নারকেল কোরার টুকরো গুলো একটি মিক্সারে ব্লেন্ড করে গুঁড়ো করে নিন।

পিঠা বানানো:

 প্রথমে ডো থেকে ছোট ছোট লেচি কেটে নিন। লেচিগুলো পাতলা করে ছোট রুটির মত বেলে নিন। তারপর রুটিগুলোর মাঝে নারিকেল গুঁড়োর ক্ষীর গুলো ছোট রুটির সাইজ অনুযায়ী পরিমাপ করে দিয়ে দিন এবং অবশ্যই রুটিটি বটে সুন্দর করে ডিজাইন করে নিন। যেন কোথাও দিয়ে নারিকেলের গুড়োর ক্ষীর বের না হয়ে যায়। অতপর একটি কড়াইতে তেল গরম করুন। এবং পিঠাগুলো তেলে ভেজে নিন।

পরিবেশন:

 পিঠাগুলো সোনালী বাদামী রঙ হয়ে উঠলে তেল থেকে নামিয়ে ফেলুন। পুলি পিঠা বা কুশলী পিঠা গুলো গরম পরিবেশন করুন। কারণ গরম গরম খেতে পিঠাগুলো খুবই সুস্বাদু হবে। 

কিছু টিপস:

  • নারকেলের গুঁড়ো কিনার সময় উচ্চমানের গুঁড়ো কেনার চেষ্টা করুন।
  • ডো তৈরির সময় পানি অল্প অল্প করে মিশিয়ে নিন।
  • পিঠা বেলার সময় পাতলা করে বেলুন।
  • তেল গরম হয়ে গেলে তারপর পিঠা ভাজুন।

কুশলী পিঠার পুষ্টিগুণ:

নারকেল কোরার গুঁড়ো দিয়ে তৈরি এই পিঠা কেবল সুস্বাদুই নয়, বরং এর পুষ্টিগুণও অনেক।

  • কার্বোহাইড্রেট: কুশলী পিঠার প্রধান উপাদান হল চালের গুঁড়ো। চালের গুঁড়ো কার্বোহাইড্রেটের একটি ভালো উৎস। কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরকে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে।
  • প্রোটিন: কুশলী পিঠায় অল্প পরিমাণে প্রোটিনও থাকে। প্রোটিন আমাদের শরীরের টিস্যু গুলো গঠন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • চর্বি: কুশলী পিঠায় অল্প পরিমাণে চর্বি থাকে। চর্বি আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়, তবে অতিরিক্ত চর্বি গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
  • ফাইবার: কুশলী পিঠায় ফাইবার থাকে। ফাইবার আমাদের হজমশক্তি উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন ও খনিজ: কুশলী পিঠায় ভিটামিন A, B, C এবং E, এবং খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং পটাশিয়াম থাকে। ভিটামিন ও খনিজ আমাদের শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কুশলী পিঠার উপকারিতা:

শক্তির উৎস: কুশলী পিঠা কার্বোহাইড্রেটের একটি ভালো উৎস, তাই এটি আমাদের শরীরকে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে।

 হজমশক্তি উন্নত করে: কুশলী পিঠায় ফাইবার থাকে যা আমাদের হজমশক্তি উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: কুশলী পিঠায় ভিটামিন A, C এবং E থাকে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

হাড় শক্তিশালী করে: কুশলী পিঠায় ক্যালসিয়াম থাকে যা আমাদের হাড় শক্তিশালী করে।

রক্তাল্পতা দূর করে: কুশলী পিঠায় আয়রন থাকে যা রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।

কুশলী পিঠার অপকারিতা:

চর্বিযুক্ত: কুশলী পিঠায় অল্প পরিমাণে চর্বি থাকে। তবে অতিরিক্ত কুশলী পিঠা গ্রহণ করলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে পারে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

গ্লুটেন: কুশলী পিঠা চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি হয়। চালের গুঁড়োতে গ্লুটেন থাকে। তাই গ্লুটেনের সমস্যা হবে।

গ্যাস্ট্রিক: কুশলী পিঠায় চাল এবং মিষ্টি ব্যবহৃত হওয়ায়, কারো কারো সামান্য পরিমাণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।

ডায়াবেটিস: যেহেতু এর মধ্যে নারিকেলের গুঁড়ো গুলো গুড় দিয়ে জল দেওয়া হয় তাই এর মধ্যে অতিরিক্ত মিষ্টভাবে থাকে তাই ডায়াবেটিস রোগীদের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শেষ কথা

কুশলী পিঠা একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার। শীতের ঠান্ডা দিনে এই পিঠা খেলে মন ভরে যায়। এই পিঠা বানানো খুব সহজ। উপরে দেওয়া পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনিও সহজেই ঘরে বসে তৈরি করতে পারবেন সুস্বাদু কুশলী পিঠা।

এই ব্লগ পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে বলে আশা করি। ধন্যবাদ সকলকে দ্রুত দেখা হচ্ছে অন্য কোন রেসিপিতে। সে পর্যন্ত রেসিপিটি ফ্রেন্ডদের মাঝে বেশি বেশি শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন